হাওয়া খেতে হাওরে, সেটা আবার কোথায়??
নিকলী হাওর। কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় নিকলী হাওরের অবস্থান। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা ঠান্ডা হাওয়ার দেশ নিকলী। পরিস্কার পানির তাজা ঘ্রাণ ও আবহাওয়ায় রোদ বৃষ্টির দুষ্টমি, জুড়িয়ে যায় মনপ্রাণ। শুভ্রসকালে দূর আকাশে পানির মধ্যখান থেকে ভেসে আসে সূর্য, লাল আলোর ঝিকমিক ঝলকে পুরো হাওরেরর পানি এক অন্যরকম সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে। বাঁশের ফ্রেম আর হাতে জাল নিয়ে বেড়িয়ে স্থানীয় জেলেরা। ভোরে সতেজ হওয়ায় নেমে পরে পানিতে, ফেলে জাল, কিছুক্ষণ অপেক্ষা, আর অপেক্ষার পরই হাসি। জাল ভরে টগবগ করে লাফাচ্ছে তাজা মাছ। হরেক রকমের মাছ। এমন দৃশ্য সত্যিই চমৎকার যা সহজে আমরা দেখতে পাই না। ঝাকে ঝাক হাঁস, দলে দল গরু, ছাগল ও ভেড়া চড়াতে নিয়ে যাচ্ছে গ্রামের বধুরা। ছোট ছোট সোনামনিরা সুন্দর পোশাক পরে দল বেধে গ্রামের রাস্তা ধরে যাচ্ছে স্কুলে। এমন সূপ্তস্বপ্ন হাওরের পারে বসে ঠান্ডা হাওয়ার সাথে এক কাপ গরম চা খেতে কে না ভালোবাসে, আছে ছোট ছোট চায়ের দোকান। পাড় থেকে বেশ কিছুদুর অব্দী হাওয়ের পানিতে ঠাই পাওয়া যায়।

পানির ঢেউ যেন ভুলিয়ে মনের দু:খ। কিছুক্ষনের জন্য হলেও মনে হয় যেন সমুদ্রের পাড়ে বসে দূরদীগন্ত খুজছি। মনে হবে একরাশ কালো মেঘেঢাকা আকাশ যেন মাথায় ভেঙ্গে পরছে। লঞ্চে করে হাওরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। ঢেউয়ের তালে তালে দুলছে লঞ্চ। যত দুর চোঁখ যায় শুধু পানি আর পানি। মাঝে মাঝে দেখা মিলবে ছোট ছোট জেলে নৌকা। আপন মনে ভাটিয়ালি গান গেয়ে মহাআনন্দে মাছ ধরছে। কিছু কিছু ঘাট ঘরে হাওরের ভেতর দিয়ে রাস্তা বয়ে গেছে, হাটু পানির এ রাস্তা কিছুদুর এগোলেই মনে যেন সমুদ্রের মাঝে দাড়িয়ে আছি। অনুভূটিটাই অন্যরকম। হাওরের পাড়ে কিছু জায়গায় খোলা মাঠ রয়েছে, চাইলে ওখানে ক্যাম্পিয় করা যাবে, তবে পাটের গন্ধটাও আবার সহ্য করে নিয়ে। নিকলী বাধের পাড়েই রয়েছে কিছু খাবার হোটেল, যেখানে মিলবে তরতাজা বিভিন্ন রকমের হাওরের মাছের তরকারী। আর স্বাদ বলার কিছু রাখে না, খুব ট্যাশ…. রাত্রীযাপনের রয়েছে সল্প সংখক হোটেল। তবে খুব বড় টিম হলে মুশকিল হয়ে যাবে। তখন আবার ক্যাম্পিং এর ব্যবস্থা করে নিতে হবে। হাওরের পাড়ে এক রাত ক্যাম্পিং, রাতে বারবিকিউ আর সাথে গিটারে গান, উপরের বিস্তৃর্ণ আকাশ সামনে থই থই করা পানি আর প্রকৃতি নিদারুন সৌন্দর্যের সাথে অনুভূতিটাও অসাধারণ।
ঢাকার মহাখালী থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত বাস, তারপর সেখান থেকে নিকলী বাজার পর্যন্ত বাস পেয়ে যাবেন। বাস থেকে নেমে হেটেই ঘুরতে পারবেন।
বি:দ্র:
পরিবর্তনটা শুরু হোক আমাদের নিজেদের থেকে, আমাদের ঘর থেকে। আমাদের ঘরকে আমরা ঠিক যেভাবে গুছিয়ে রাখি – আমরা চাইলে আমাদের পাড়া, মহল্লা, দেশ তথা পুরো পৃথিবীকে গুছিয়ে রাখতে পারি। শুধু প্রয়োজন সচেতনতা। ময়লা আবর্জনা যেভানে সেখানে না ফেলে, নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবো। অপচনশীল যেকোন আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ/প্যাকেট, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক , প্লাস্টিক বোতল এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবো অথবা নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করবো। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এটাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদের। ভ্রমনে গিয়ে পরিবেশের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেই দিক খেয়াল রাখা আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব। নিজেরা নিজেদের জায়গা থেকে পরিবেশ রক্ষার কাজ করলে, প্রথিবী আরো সুন্দর ও সবুজে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।