শান্ত সুন্দর ও ঠান্ডা পরিবেশের ছোট্ট একটি শহর কালিমপং। দার্জিলিং এর কিছু দুরেই অবস্থান। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং এ বাস বা জিপে করে সহজেই যাওয়া যায়। সময় লাগে ৩ ঘন্টার মতন
কাঞ্চনজঙ্ঘা কালিমপং-এ এক মহৎ প্রেক্ষাপট নিবেদন করে। ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে এটি সুন্দর অর্কিড, বিভিন্ন ফুলের বর্ণময় শৃঙ্খলে ভরে ওঠে। আঁকাবাঁকা নদী প্রান্তের উপর বসে কিছুক্ষণ আত্মদর্শন করুন। অথবা আপনি যদি কোন হৃদয় স্পন্দিত সন্তুষ্টি চান, তবে তিস্তা নদীতে ভেলায় চড়ে ভ্রমণ বা নেওড়া জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণ করতে পারেন।
কালিমপং-এ ভ্রমণ, আপনাকে মহিমান্বিত হিমালয়ের কোলে একটি সরল শান্ত ও মনোরম পাহাড় পশ্চাদপসরণে আপনাকে নিয়ে যাবে। এই স্থানটির নামের উৎপত্তির পিছনে অনেক পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এই নাম ভূটানী শব্দ থেকে অভিব্যক্ত হয়েছে, যার অর্থ হল ‘রাজার মন্ত্রীদের শক্তিশালী অধিষ্ঠান’। স্থানীয় ভাষায়, এই নামের অর্থ হল ‘কালো উদ্দীপনা’। লেপচা মতানুযায়ী কালিমপং-এর অর্থ হল ‘শৈলশ্রণী যেখানে আমরা খেলি’। এটি কথিত আছে যে এখানকার স্থানীয় আদিবাসীরা যখন কৃষিতে জড়িত থাকে না, তখন তারা ক্রীড়া ক্ষেত্রের আয়োজন করে-তারপর থেকে এই নামকরণ হয়। মহৎ কাঞ্চনজঙ্ঘা, কালিমপং-এ ভ্রমণার্থী হিসাবে আপনাকে স্বাগত জানায়। হিমালয়ের পাদদেশে আবৃত সবুজ শৈলশিরা বোধশক্তিতে এক আকর্ষণীয় প্রভাব বিস্তার করে। সরল, শান্ত ও মনোরম তিস্তা ও রঙ্গিৎ-এর প্রবাহমান এক বিরল সৌন্দর্য এই অঞ্চলকে ঋণী করে তুলেছে।

কালিমপং–এ পৌঁছানোর উপায়
৪১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কালিমপং একটি প্রশান্ত পাহাড়ের পশ্চাদপসরণ। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে, সিকিম রাজ্যের সংলগ্নে এটি অবস্থিত। সবুজ বৃক্ষের উৎকলিত প্রসারণ ও অগণ্য প্রজাতির অর্কিড চোখকে মুগ্ধ করে তোলে।
ভ্রমণের সেরা জায়গাগুলো
গৌরিপুর হাউস:
বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদচিহ্ন ধারন করা আছে গৌরিপুর হাউসে। চিত্রাভানু এটির স্থানীয় নাম। মংপু যাওয়া আসার পখে রবিন্দ্রনাথ প্রায় এখানে অবকাশ যাপন করতেন। পাহাড়ি শান্ত পরিবেশ অবস্থিত বাড়িটি খুবই অস্বধারণ।
ডেলো পার্ক :
প্রকৃতির নিদারুন পরিবেশে পাহাড়ের এক অপরূপ সৌন্দর্যবর্ণিত জায়গায় এর অবস্থান। সুন্দর পরিপাটি করে পাথড়ের আস্তরনে বেস্টিত করা ডেলো পার্কের মূল ভবনটি। সামনে খোলা মাঠ ও চারপাশে ছোট বড় অনেক বেঞ্চ, চমৎকার ও বাহারি রঙ্গের ফুলগাছের সমারোহ পার্কের ভেতরের পরিবেশকে আরো মনোমুগ্ধ করে তুলেছে। একপাশে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট। দুর পাহাড়ের সবুজ ঘেষে যেন মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে স্বেত শুভ্র আরেকটি পাহাড়, হ্যা এটাই সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা। সেখান থেকেই নিচের দিকে তাকালে দেখা যাবে, পাহাড়ের ফাকে ফাকে ছোট ছোট বিভিন্ন রঙ্গের বাড়ি ঘর, মনে হবে যেন প্রশান্তি এক টুকরো অংশ এখানেই। পার্কে চাইলে গ্রুপেও আসা যায়, ক্যাম্পিং অথবা কোন পিকনিকের আয়োজনে এখানে করা যাবে।
হনুমান মন্দির
ডেলো পার্ক থেকে একটু নিচে নেমে এলেই মিলবে হনুমান মন্দির আরেকটা ছোট্ট পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে গণেশ প্রতিমা। দূর থেকে অনেক সুন্দর লাগে। রাস্তা থেকে কিছু উপরে উঠতে হবে সিঁড়ি বেয়ে, খুব পরিষ্কার সাজানো মন্দির।
হনুমান মন্দির থেকে বের হলেই চোঁখে পরকে ছোট্ট একটা মনেস্ট্রী, চমৎকার রঙ্গিন মনেস্ট্রীতে ফটোগ্রাফী বেশ দারুন হয়।
এবার আবার বেক করবো কালিম্পং শহরের দিকে।

ক্যাকটাস গার্ডেন:
শহর থেকে খানিকটা দূর যেতে হবে ক্যাকটাস গার্ডেনের উদ্দেশ্য। ছোট্ট জনবসতির ভেতর দিয়ে পৌছালাম ক্যাকটাস গার্ডেনে। সাজানো পরিপাটি বড় বড় ৫ / ৬ টা ঘরে সাজানো ক্যাকটাসগুলো। অদ্ভুদ আকারের এই গাছগুলো দেখে মনে গেল কিছু মুভির কথা, যেসব মুভিতে মানুষখেকো গাছে এবং ভৌতিক কিছু গাছের বর্ণনা দেখানো আছে, সেই ধরনের গাছগুলো এখানে। অনেক গাছগুলোই প্রায় আমার থেকেও অনেক বড়। আবার কিছু কিছু ক্যাকটাসের অসাধারনে রঙ্গ বেরঙ্গের ফুল সত্যি মুগ্ধ করে ফেলেছে। এই গার্ডেটনটি এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাকটাস গার্ডেন বলা হয়।
গার্ডেনে ক্যাকটাস ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। গার্ডেটের একপান্তে রয়েছে ভিউ পয়েন্ট, এখান থেকে দেখা যায় সবুজ পাহাড়ের ববুকে ভেসে আছে পুরো কালিম্পং শহর।
মনেস্ট্রি ভ্রমণ
কালিম্পং থেকে ডেলো পার্ক যেতেই সাকা মনেস্ট্রি চোঁখে পরবে.. চমৎকার সুন্দর এই মনেট্রি মুলত একটা স্কুল। বৌদ্দ ধর্মের বাচ্চাদের স্কুল এটা। এবং সেখানকার নমকরা একটা বৌদ্দ স্কুল।
এখানে গেলে দেখতে পারবেন, স্কুলের বিভিন্ন কার্যকলাপ। বাচ্চাদের সকালে প্যারেট করানো, বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানোর ধরন।
জনপ্রিয় আরেক মনেট্রি হল দূরপিন.
কারিম্পং এ অনেকগুলো মনেস্ট্রি আছে, তারমধ্যে দূরপিন মনেস্ট্রি। পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে ৪ তলা এই মনেট্রিটি। বাহারি রঙ্গে এবং দারুন সব সৌন্দর্যবর্ধন ছোট বৃক্ষে সাজানো এই মনেট্রি। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে ২৫-৩০ টি স্মৃতিস্তম্ভ রেয়েছে। পার্কের মত সজ্জিত পুরো মনেস্ট্রিটি। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন এখানে। পাশেই আছে সুবিশাল মাঠ। স্থানীয় কালচারাল অনুষ্ঠান এবং স্কুলের যাবতীয় খেলাধুলা পরিচালনার কর্যক্রম হয় এই মাঠটিতে। মনেট্রির আরেক পাশে রয়েছে দূরপিন ভিউ পয়েন্ট। যেখান থেকে পুরো কালিম্পং এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
দূরপিন দেখা শেষ কালিম্পং এর দিকে ফিরে আসার সময় দেখা মিলবে কালিম্পং আর্মি ক্যান্টনমেন্ট। বেশ চমৎকার দৃষ্টিনন্দন এড়িয়া। তবে সেখানে ছবি বা ভিডিও ধারনের নিষেধ আছে। শুধু ঘুরে দেখতে পারবেন। আরেকটু এগিয়ে দেখা মিলবে, সবুজ অরণ্যঘেরা পাহাড়ে মাঝে এক নিদারুন সৌন্দর্যমন্ডিত আর্মি গলফ মাঠ। পাহাড়ি ঢালের সাথে তাল মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাঠটি। মাঠের অপর প্রান্তেই রয়েছে মরগান হাউস। ব্রিটিশ সাশনামলে তৈরিকৃত এই ভবনটিতে বর্তমানে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ আছে। এটি অনেক পুরানো একটি বাংলো।
লোলেগ্রাম :
ছোট্ট শান্ত একটি গ্রাম হল লোলেগ্রাম। সবুজ পাহাড়ি প্রকৃতি লোলেগ্রামকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছে। কালিম্পং ও লাভা থেকে পাইনের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে লোলেগ্রাম যেতে এক থেকে দের ঘন্টা লাগে।
কালিম্পং এ আরো অনেক কিছু আছে দেখার মতন,
লেপচা মিউজিয়াম
টসোঙ্গা আশ্রম
রিশপ রিম্বিক
ম্যাক ফারলেন চার্চ
রোমান ক্যাথলিক চার্চ
তিস্তা বাজার
কালিম্পং আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট সেন্টার
ইত্যাদি
বি:দ্র:
পরিবর্তনটা শুরু হোক আমাদের নিজেদের থেকে, আমাদের ঘর থেকে। আমাদের ঘরকে আমরা ঠিক যেভাবে গুছিয়ে রাখি – আমরা চাইলে আমাদের পাড়া, মহল্লা, দেশ তথা পুরো পৃথিবীকে গুছিয়ে রাখতে পারি। শুধু প্রয়োজন সচেতনতা। ময়লা আবর্জনা যেভানে সেখানে না ফেলে, নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবো। অপচনশীল যেকোন আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ/প্যাকেট, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক , প্লাস্টিক বোতল এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবো অথবা নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করবো। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এটাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদের। ভ্রমনে গিয়ে পরিবেশের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেই দিক খেয়াল রাখা আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব। নিজেরা নিজেদের জায়গা থেকে পরিবেশ রক্ষার কাজ করলে, প্রথিবী আরো সুন্দর ও সবুজে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।